কারক । বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি নবম-দশম শ্রেণি । Nahid Hasan Munnna

মূলত ক্রিয়ার সঙ্গে বাক্যের বিশেষ্য ও সর্বনামের যে সম্পর্ক, তাকে কারক বলে। কারক সম্পর্ক বােঝাতে বিশেষ্য ও সর্বনামের সঙ্গে সাধারণত বিভক্তি ও অনুসর্গ যুক্ত হয়ে থাকে।

কারক ছয় প্রকার: কর্তা কারক, কর্ম কারক, করণ কারক, অপাদান কারক, অধিকরণ কারক ও সম্বন্ধ কারক।

কর্তা কারক

ক্রিয়া যার দ্বারা সম্পাদিত হয়, তাকে কর্তাকারক বলে। বাক্যের কর্তা বা উদ্দেশ্যই কর্তা কারক। কর্তা কারকে সাধারণত বিভক্তি যুক্ত হয় না। যেমন –

আমরা নদীর ঘাট থেকে রিকশা নিয়েছিলাম।

অনেকগুলাে বন্য হাতি বাগান নষ্ট করে দিল। কর্তা কারকে কখনাে কখনাে এ বিভক্তি যুক্ত হয়। যেমন –

পাগলে কিনা বলে, ছাগলে কিনা খায়।

কর্ম কারক

যাকে আশ্রয় করে কর্তা ক্রিয়া সম্পাদন করে, তাকে কর্ম কারক বলে। বাক্যের মুখ্য কর্ম ও গৌণ কর্ম – উভয় ধরনের কর্মই কর্ম কারক হিসেবে গণ্য হয়। সাধারণত মুখ্য কর্ম কারকে বিভক্তি হয় না, তবে গৌণ কর্ম কারকে ‘কে’ বিভক্তি হয়। যেমন –

সে রােজ সকালে এক প্লেট ভাত খায়। শিক্ষককে জানাও। অসহায়কে সাহায্য করে। বেগম রােকেয়া সমাজের নানা রকম অন্ধতা, গোঁড়ামি, ও কুসংস্কারকে তীব্র ভাষায় সমালােচনা করে গেছেন।

কাব্যভাষায় কর্মকারকে ‘রে বিভক্তি হয়। যেমন –

আমারে তুমি করিবে ত্রাণ এ নহে মাের প্রার্থনা।

করণ কারক

যার দ্বারা বা যে উপায়ে কর্তা ক্রিয়া সম্পাদন করে, তাকে করণ কারক বলে। এই কারকে সাধারণত দ্বারা, ‘দিয়ে’, ‘কর্তৃক ইত্যাদি অনুসর্গ যুক্ত হয়। যেমন –

ভেড়া দিয়ে চাষ করা সম্ভব নয়।

চাষিরা ধারালাে কাস্তে দিয়ে ধান কাটছে।

অপাদান কারক

যে কারকে ক্রিয়ার উৎস নির্দেশ করা হয়, তাকে অপাদান কারক বলে। এই কারকে সাধারণত হতে’, ‘থেকে ইত্যাদি অনুসর্গ শব্দের পরে বসে। যেমন –

জমি থেকে ফসল পাই। কাপটা উঁচু টেবিল থেকে পড়ে ভেঙে গেল।

অধিকরণ কারক

যে কারকে স্থান, কাল, বিষয় ও ভাব নির্দেশিত হয়, তাকে অধিকরণ কারক বলে। এই কারকে সাধারণত ‘এ’, ‘য়’, ‘য়ে’, ‘-তে’ ইত্যাদি বিভক্তি শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়। যেমন –

বাবা বাড়িতে আছেন। বিকাল পাঁচটায় অফিস ছুটি হবে। রাজীব বাংলা ব্যাকরণে ভালাে।

সম্বন্ধ কারক

যে কারকে বিশেষ্য ও সর্বনামের সঙ্গে বিশেষ্য ও সর্বনামের সম্পর্ক নির্দেশিত হয়, তাকে সম্বন্ধ কারক বলে। এই কারকে ক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক পরােক্ষ। এই কারকে শব্দের সঙ্গে ‘র’, -এর’, ‘-য়ের’, ‘কার’, ‘-কের ইত্যাদি বিভক্তি যুক্ত হয়। যেমন –

ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না। আমার জামার বােতামগুলাে একটু অন্য রকম। তখনকার দিনে পায়ে হেঁটে চলতে হতাে মাইলের পর মাইল।

অনুশীলনী

১. বাক্যে ক্রিয়ার সঙ্গে কোন পদের সম্পর্ককে কারক বলে?

ক. বিশেষ্য ও বিশেষণ

খ. বিশেষ্য ও সর্বনাম

গ. বিশেষ্য ও অনুসর্গ

ঘ. বিশেষণ ও আবেগ

২. ক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক নেই, তেমন কারকের নাম কী?

ক. সম্বন্ধ

খ. অপাদান

গ. অধিকরণ

ঘ. কর্তা

৩. বাংলা ভাষায় কারকের সংখ্যা কয়টি?

ক. তিন

খ. চার

গ. পাঁচ

ঘ. ছয়।

৪. ‘আমরা নদীর ঘাট থেকে রিকশা নিয়েছিলাম’ – বাক্যটিতে আমরা কোন কারক?

ক. কর্তা

খ. কর্ম

গ, করণ

ঘ. অপাদান

৫. যাকে আশ্রয় করে কর্তা ক্রিয়া সম্পাদন করে তাকে কোন কারক বলে?

ক. কর্তা

খ. কর্ম

গ. অধিকরণ

ঘ. অপাদান

৬. ‘শিক্ষককে জানাও’ – এই বাক্যে শিক্ষককে কোন কারক?

ক. অধিকরণ

খ. অপাদান

গ. কর্তা

ঘ. কর্ম

৭. ‘ভেড়া দিয়ে চাষ করা সম্ভব নয়’ – এই বাক্যে ‘ভেড়া দিয়ে কোন কারক?

ক. সম্বন্ধ

খ. কর্ম

গ. করণ

ঘ. কর্তা

৮. ‘জমি থেকে ফসল পাই’ – বাক্যটিতে ‘জমি থেকে কোন কারক?

ক. করণ

খ. কর্ম

গ. অপাদান

ঘ. অধিকরণ

৯. কোন কারকে মূলত ক্রিয়ার স্থান, সময় ইত্যাদি বােঝায়?

ক. অপাদান

খ. অধিকরণ

গ. সম্বন্ধ

. কর্ম

১০. ‘গাছের ফল পেকেছে – এখানে কোন বিভক্তির প্রয়ােগ হয়েছে?

ক. -র

খ. -এর

গ. -য়ের

ঘ. -এ

This article is written by :

Nahid Hasan Munna

University of Rajshahi

FOUNDER & CEO OF NAHID24

Follow him on FacebookInstagramYoutubeTwitterLinkedin

Leave a Comment