বাক্যের প্রকাশভঙ্গিকে বাচ্য বলে। বাক্যের মধ্যে ক্রিয়ার ভূমিকা বদলে গিয়ে একই বক্তব্যের প্রকাশভঙ্গি আলাদা হয়ে যায়। ক্রিয়া কখনাে কর্তাকে অনুসরণ করে, ক্রিয়া কখনাে কর্মকে অনুসরণ করে, আবার ক্রিয়াই কখনাে বাক্যের মধ্যে মুখ্য হয়ে ওঠে। যেমন –
সে বাজারে যায়।
সাহসী ছেলেটিকে পুরস্কৃত করা হয়েছে।
কোথায় যাওয়া হচ্ছে?
উপরের প্রথম বাক্যে যায়’ ক্রিয়াটি ‘সে’ কর্তার অনুসারী। দ্বিতীয় বাক্যে করা হয়েছে ক্রিয়াটি সাহসী ছেলেটিকে কর্মের অনুসারী। তৃতীয় বাক্যে যাওয়া হচ্ছে ক্রিয়াই মুখ্য। প্রকাশভঙ্গির এই ভিন্নতা অনুযায়ী বাচ্য তিন প্রকার কর্তাবাচ্য, কর্মবাচ্য ও ভাববাচ্য।
১. কর্তাবাচ্য
যে বাক্যের ক্রিয়া কর্তাকে অনুসরণ করে, তাকে কর্তাবাচ্য বলে। এক্ষেত্রে ক্রিয়ার রূপটি কর্তার পক্ষ অনুযায়ী হয়। যেমন –
ঝরনা ছবি আঁকে।
আমি আগামীকাল বাড়ি ফিরব। অজীব বিশেষ্যও অনেক সময়ে কর্তার ভূমিকা গ্রহণ করে। যেমন –
ফ্যানটা অনেক জোরে ঘুরছে। শরতে শিউলি ফোটে।
২. কর্মবাচ্য
যে বাক্যের ক্রিয়া কর্মকে অনুসরণ করে, তাকে কর্মবাচ্য বলে। যেমন –
পুলিশ কর্তৃক ডাকাত ধৃত হয়েছে। চিঠিটা পড়া হয়েছে।
৩. ভাববাচ্য
যে বাক্যের ক্রিয়া-বিশেষ্য বাক্যের ক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে, তাকে ভাববাচ্য বলে। যেমন –
আমার যাওয়া হলাে না। কোথা থেকে আসা হলাে।
এখানে যাওয়া’, ‘আসা’ – এগুলাে হলাে ক্রিয়া-বিশেষ্য।
বাচ্য পরিবর্তন
বাচ্য পরিবর্তনের কয়েকটি উদাহরণ নিচে দেওয়া হলাে:
১. কর্তাবাচ্য থেকে কর্মবাচ্য
কর্তাবাচ্যের বাক্যকে কর্মবাচ্যে পরিবর্তিত করতে হলে কর্তার সঙ্গে দ্বারা, দিয়ে, কর্তৃক ইত্যাদি অনুসর্গ যােগ করতে হয় এবং ক্রিয়ারূপকে কর্মের অনুসারী করতে হয়। যেমন –
কর্তাবাচ্য: জাহানারা ইমাম একাত্তরের দিনগুলি রচনা করেছেন। কর্মবাচ্য: জাহানারা ইমাম কর্তৃক একাত্তরের দিনগুলি রচিত হয়েছে। কর্তাবাচ্য: তারা বাড়িটি তৈরি করেছে। কর্মবাচ্য তাদের দ্বারা বাড়িটি তৈরি হয়েছে।
২. কর্মবাচ্য থেকে কর্তাবাচ্য
কর্মবাচ্যের বাক্যকে কর্তাবাচ্যে রূপান্তরিত করতে হলে কর্তার সঙ্গে যুক্ত দ্বারা, দিয়ে, কর্তৃক প্রভৃতি অনুসর্গ বাদ দিতে হয় এবং ক্রিয়াকে কর্তার অনুসারী করতে হয়। যেমন –
কর্মবাচ্য: প্রধান শিক্ষক কর্তৃক জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হয়েছে। কর্তাবাচ্য: প্রধান শিক্ষক জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছেন। কর্মবাচ্য: আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। কর্তাবাচ্য: আমরা কঠোর পরিশ্রম করি।
৩. কর্তাবাচ্য থেকে ভাববাচ্য
কর্তাবাচ্যের বাক্যকে ভাববাচ্যে রূপান্তরিত করতে হলে একটি ক্রিয়াবিশেষ্যকে নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় নিয়ে আসতে হয়। যেমন –
কর্তাবাচ্য: তুমি কখন এলে? ভাববাচ্য: কখন আসা হলাে? কর্তাবাচ্য: ওখানে কেন গেলে? ভাববাচ্য: ওখানে কেন যাওয়া হলাে?
৪. ভাববাচ্য থেকে কর্তাবাচ্য
ভাববাচ্যের বাক্যকে কর্তাবাচ্যে রূপান্তরিত করতে হলে ক্রিয়াকে কর্তার অনুসারী করতে হয়। যেমন –
ভাববাচ্য: একটু বাইরে বেড়িয়ে আসা যাক। কর্তাবাচ্য: একটু বাইরে বেড়িয়ে আসি। ভাববাচ্য: এবার বাঁশিটি বাজানাে হােক। কর্তাবাচ্য: এবার বাঁশিটি বাজাও।
অনুশীলনী
১. বাচ্য বলতে বােঝায় –
ক, বাক্যের অর্থ
খ. বাক্যের প্রকাশভঙ্গি
গ. বাক্যের ভাব
ঘ. বাক্যের প্রয়ােগ
২. বাক্যের মধ্যে কিসের ভূমিকা বদলে গিয়ে একই বাক্যের প্রকাশভঙ্গি আলাদা হয়?
ক. যােজক
খ. অনুসর্গ
গ. আবেগ
ঘ. ক্রিয়া
৩. বাচ্য কত প্রকার?
ক. দুই
খ. তিন
গ. চার
ঘ. পাঁচ
৪. কর্তাবাচ্যের বাক্যকে ভাববাচ্যে রূপান্তরিত করতে হলে কোন পদকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়?
ক. বিশেষ্য
খ. বিশেষণ
গ. ক্রিয়া
ঘ. ক্রিয়া-বিশেষ্য
৭. আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হয় কর্মবাচ্যের এই বাক্যটি কর্তাবাচ্যে কী হবে?
ক. আমরা কঠোর পরিশ্রম করি
খ. আমার দ্বারা কঠোর পরিশ্রম হয়
গ. আমাদের কঠোর পরিশ্রম করা লাগে
ঘ. কঠোর পরিশ্রম আমাদের কাজ।
This article is written by :
University of Rajshahi
FOUNDER & CEO OF NAHID24
Follow him on Facebook, Instagram, Youtube, Twitter, Linkedin