বাক্যে উদ্দেশ্য বা কর্তা কী করে বা কর্তার কী ঘটে বা হয়, তা নির্দেশ করা হয় যে পদ দিয়ে তাকে ক্রিয়া বলে। যেমন –
রাজীব খেলছে।
বৃষ্টি হতে পারে। ক্রিয়ামূল বা ধাতুর সঙ্গে বিভক্তি যুক্ত হয়ে ক্রিয়া গঠিত হয়। যেমন –
পড়ু + ই = পড়ি, পড় + এ = পড়ে, পডু + ছে = পড়ছে, পডু + বে = পড়বে পক্ষ (পুরুষ) এবং কাল ভেদে ক্রিয়ার রূপভেদ হয়। যেমন –
পক্ষভেদঃ আমি পড়ি, আমরা পড়ি, তুমি পড়াে, তােমরা পড়াে, সে পড়ে, তারা পড়ে। কালভেদ: আমি পড়ি, আমি পড়ছি, আমি পড়েছি, আমি পড়েছিলাম, আমি পড়ছিলাম, আমি পড়ব।
ক্রিয়ার প্রকারভেদ
ভাবপ্রকাশের দিক দিয়ে, বাক্যে কর্মের উপস্থিতির ভিত্তিতে এবং গঠন বিবেচনায় ক্রিয়াকে নানা ভাগে ভাগ করা যায়।
ক, ভাবপ্রকাশের দিক দিয়ে ক্রিয়া দুই প্রকার:
১. সমাপিকা ক্রিয়া: যে ক্রিয়া দিয়ে ভাব সম্পূর্ণ হয়, তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে। যেমন – ভালাে করে পড়াশােনা করবে।
২. অসমাপিকা ক্রিয়া: যে ক্রিয়া ভাব সম্পূর্ণ করতে পারে না, তাকে অসমাপিকা ক্রিয়া বলে। যেমন – ভালাে করে পড়াশােনা করলে ভালাে ফল হবে।। অসমাপিকা ক্রিয়া তিন ধরনের: ১. ভূত অসমাপিকা, ২. ভাবী অসমাপিকা এবং ৩, শর্ত অসমাপিকা। যথা:
ভূত অসমাপিকা: সে গান করে আনন্দ পায়।
ভাবী অসমাপিকা: সে গান শিখতে রাজশাহী যায় ।
শর্ত অসমাপিকা: গান করলে তার মন ভালাে হয়।
খ. বাক্যের মধ্যে কর্মের উপস্থিতির ভিত্তিতে ক্রিয়া তিন প্রকার:
১. অকর্মক ক্রিয়া: বাক্যে ক্রিয়ার কোনাে কর্ম না থাকলে সেই ক্রিয়াকে অকর্মক ক্রিয়া বলে। যেমন – সে ঘুমায়। এই বাক্যে কোনাে কর্ম নেই।
২. সকর্মক ক্রিয়া: বাক্যের মধ্যে ক্রিয়ার কর্ম থাকলে সেই ক্রিয়াকে সকর্মক ক্রিয়া বলে। যেমন – সে বই পড়ছে। এই বাক্যে পড়ছে’ হলাে সকর্মক ক্রিয়া। বই হলাে ‘পড়ছে’ ক্রিয়ার কর্ম।
৩. দ্বিকর্মক ক্রিয়া: বাক্যের মধ্যে ক্রিয়ার দুটি কর্ম থাকলে সেই ক্রিয়াকে দ্বিকর্মক ক্রিয়া বলে। যেমন – শিক্ষক ছাত্রকে বই দিলেন। এই বাক্যে ‘দিলেন একটি দ্বিকর্মক ক্রিয়া। কী দিলেন প্রশ্নের উত্তর দেয় মুখ্য কর্ম (বই), আর কাকে দিলেন প্রশ্নের উত্তর দেয় গৌণ কর্ম (ছাত্রকে)।
গ. গঠন বিবেচনায় ক্রিয়া পাঁচ রকম:
১. সরল ক্রিয়া: একটিমাত্র পদ দিয়ে যে ক্রিয়া গঠিত হয় এবং কর্তা এককভাবে ক্রিয়াটি সম্পন্ন করে, তাকে সরল ক্রিয়া বলে। যেমন – সে লিখছে। ছেলেরা মাঠে খেলছে। এখানে লিখছে ও খেলছে – এগুলাে সরল ক্রিয়া।
২. প্রযােজক ক্রিয়া: কর্তা অন্যকে দিয়ে কাজ করালে তাকে প্রযােজক ক্রিয়া বলে। যেমন – তিনি আমাকে অঙ্ক করাচ্ছেন; রাখাল গরুকে ঘাস খাওয়ায় – এখানে করাচ্ছেন ও খাওয়ায় প্রযােজক ক্রিয়া।
৩. নামক্রিয়া: বিশেষ্য, বিশেষণ বা ধ্বন্যাত্মক শব্দের শেষে -আ বা আনাে প্রত্যয় যুক্ত হয়ে যে ক্রিয়া গঠিত হয়, তাকে নামক্রিয়া বলে। যেমন – বিশেষ্য চমক শব্দের সঙ্গে আননা যুক্ত হয়ে হয় চমকানাে; আকাশে বিদ্যুৎ চমকায়; বিশেষণ কম শব্দের সঙ্গে -আ যুক্ত হয়ে হয় কম: বাজারে সবজির দাম কমছে না; ধ্বন্যাত্মক ছটফট শব্দের সঙ্গে আননা যুক্ত হয়ে হয় ছটফটানাে: জবাই করা মুরগি উঠানে ছটফটায়।
৪. সংযোেগ ক্রিয়া: বিশেষ্য, বিশেষণ বা ধ্বন্যাত্মক শব্দের পরে করা, কাটা, হওয়া, দেওয়া, ধরা, পাওয়া, খাওয়া, মারা প্রভৃতি ক্রিয়া যুক্ত হয়ে সংযােগ ক্রিয়া গঠিত হয়। করা ক্রিয়া যােগে গান করা, গরম করা, ঠনঠন করা, ব্যাট করা; কাটা ক্রিয়া যােগে: সাঁতার কাটা, বিপদ কাটা; হওয়া ক্রিয়া যােগে: উদয় হওয়া, বড়াে হওয়া, রাজি হওয়া; দেওয়া ক্রিয়া যােগে: কথা দেওয়া, মন দেওয়া, দোষ দেওয়া; ধরা ক্রিয়া যােগে: ভাঙন ধরা, মরচে ধরা, ক্যাচ ধরা; পাওয়া ক্রিয়া যােগে: লজ্জা পাওয়া, কষ্ট পাওয়া, বৃদ্ধি পাওয়া খাওয়া ক্রিয়া যােগে: আছাড় খাওয়া, মার খাওয়া, ডিগবাজি খাওয়া মারা ক্রিয়া যােগে: উঁকি মারা, পকেট মারা।
৫. যৌগিক ক্রিয়া: অসমাপিকা ক্রিয়ার সঙ্গে সমাপিকা ক্রিয়া যুক্ত হয়ে যখন একটি ক্রিয়া গঠন করে, তখন তাকে যৌগিক ক্রিয়া বলে। যেমন – মরে যাওয়া, কমে আসা, এগিয়ে চলা, হেসে ওঠা, উঠে পড়া, পেয়ে বসা, সরে দাঁড়ানাে, বেঁধে দেওয়া, বুঝে নেওয়া, বলে ফেলা, করে তােলা, চেপে রাখা ইত্যাদি।
অনুশীলনী
১. বাক্যের উদ্দেশ্য বা কর্তা কী করে বা কর্তার কী ঘটে বা হয় তা কোন পদের দ্বারা নির্দেশিত হয়?
ক. বিশেষ্য
খ. বিশেষণ
গ. ক্রিয়া
ঘ. যােজক
২. ধাতুর সঙ্গে কী যুক্ত হয়ে ক্রিয়া হয়?
ক. প্রত্যয়
খ. অনুসর্গ
গ. বিভক্তি
ঘ. উপসর্গ
৩. ক্রিয়ার রূপ পরিবর্তিত হয় –
ক. পুরুষ ভেদে
খ. কাল ভেদে
গ. বচন ভেদে
ঘ. ক ও খ উভয়ই
৪. নিচের কোন বাক্যটিতে অসমাপিকা ক্রিয়া নেই?
ক. সে গান করে আনন্দ পায়
খ. রাতের বেলা আকাশে চাঁদ ওঠে
গ. ভালাে করে পড়াশােনা করবে
ঘ. পড়াশােনা করলে ভালাে ফল হবে
৫. কোনটি অসমাপিকা ক্রিয়ার ধরন?
ক. শর্ত
খ. ভূত
গ. ভাবী
ঘ. সবগুলােই
৬. নিচের বাক্যগুলােতে কোনটি অকর্মক ক্রিয়ার উদাহরণ?
ক. সে বই পড়ছে
খ, লতা ঘুমায়
গ. তিনি আমাকে বই দিলেন
ঘ. সে গল্প লিখছে
৭. অন্যকে দিয়ে করা বােঝালে কোন ক্রিয়া হয়?
ক, সরল ক্রিয়া
খ. নাম ক্রিয়া
গ. প্রযােজক ক্রিয়া
ঘ. যৌগিক ক্রিয়া
৮. সমাপিকা ও অসমাপিকা ক্রিয়া যুক্ত হয়ে যে ক্রিয়া গঠন করে তাকে কী বলে?
ক. সংযােগ ক্রিয়া
খ. নাম ক্রিয়া
গ. সরল ক্রিয়া
ঘ. যৌগিক ক্রিয়া
৯. নিচের কোনটি যৌগিক ক্রিয়ার উদাহরণ?
ক, এগিয়ে চলা
খ. উদয় হওয়া
গ. ডিগবাজি খাওয়া
ঘ. বৃদ্ধি পাওয়া
১০. ধ্বন্যাত্মক নামক্রিয়ার উদাহরণ আছে কোন বাক্যে?
ক. চিঠিটা ওকে দিয়ে লেখাতে হবে
খ. পাখিটা ছটফটাচ্ছে
গ. ঘণ্টা বেজে উঠল
ঘ. মা শিশুকে চাঁদ দেখাচ্ছেন।
This article is written by :
University of Rajshahi
FOUNDER & CEO OF NAHID24
Follow him on Facebook, Instagram, Youtube, Twitter, Linkedin