শব্দদ্বিত্ব । বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি নবম-দশম শ্রেণি । Nahid Hasan Munnna

অভিন্ন বা সামান্য পরিবর্তিত চেহারায় কোনাে শব্দ পরপর দুইবার ব্যবহৃত হলে তাকে শব্দদ্বিত্ব বলে। শব্দদ্বিত্ব তিন ধরনের: অনুকার দ্বিত্ব, ধ্বন্যাত্মক দ্বিত্ব ও পুনরাবৃত্ত দ্বিত্ব।

১. অনুকার দ্বিত্ব

পরপর প্রয়ােগ হওয়া কাছাকাছি চেহারার শব্দকে অনুকার দ্বিত্ব বলে। এতে প্রথম শব্দটি অর্থপূর্ণ হলেও প্রায় ক্ষেত্রে দ্বিতীয় শব্দটি অর্থহীন হয় এবং প্রথম শব্দের অনুকরণে তৈরি হয়। এই অনুকরণ প্রক্রিয়ায় দ্বিতীয় শব্দের শুরুতে ট, ফ, ব, ম, শ প্রভৃতি ধ্বনি যুক্ত থাকতে দেখা যায়। তাতে শব্দকে খানিকটা অনির্দিষ্ট, সাধারণ বা গুরুত্বহীন করা হয়। প্রকাশ পায় এই রকম একটা ভাব। যেমন –অঙ্ক-টঙ্ক, আম-টাম, কেক-টেক, ঘর-টর, গরু-টরু, ছাগল-টাগল, ঝাল-টাল, হেন-তেন, লুচিফুচি, টাটু-ফাটু, আগড়ম-বাগড়ম, চাকর-বাকর, এলােমেলাে, ঝিকিমিকি, কচর-মচর, ঝিলমিল, শেষ-মেষ, অল্পসল্প, বুদ্ধিশুদ্ধি, গুটিশুটি, মােটাসােটা, নরম-সরম, ব্যাপার-স্যাপার, বুঝেসুঝে।

অনুকার দ্বিত্বে অনেক সময়ে স্বরের পরিবর্তন ঘটে, যেমন –আড়াআড়ি, খোঁজাখুঁজি, ঘােরাঘুরি, চুপচাপ, ঠেকাঠেকি, তাড়াতাড়ি, দলাদলি, দামাদামি, পাকাপাকি, বাড়াবাড়ি, মােটামুটি, টুকরাে-টাকরা, ধারধাের, জোগাড়-জাগাড়।

২. ধ্বন্যাত্মক দ্বিত্ব

কোনাে প্রাকৃতিক ধ্বনির অনুকরণে যেসব শব্দ তৈরি হয়, সেগুলােকে ধ্বন্যাত্মক শব্দ বলে। যেমন – ঠন একটি ধ্বন্যাত্মক শব্দ। কোনাে ধাতব পদার্থের সঙ্গে অন্য কোনাে ধাতব পদার্থের সংঘর্ষে এই ধরনের ধ্বনি তৈরি হয়। ঠন শব্দটি পরপর দুই বার বা কখনাে ততােধিক বার ব্যবহৃত হলে ধ্বন্যাত্মক দ্বিত্ব সৃষ্টি হয়। যেমন – সাঁ করে তির ছুটে যায়, সাঁ সাঁ করে তিরগুলাে ছুটে যাচ্ছে, সাঁ সাঁ সাঁ করে অসংখ্য তির চারদিকে ছুটে গেল।

অনেক সময়ে কল্পিত ধ্বনির ভিত্তিতেও ধ্বন্যাত্মক দ্বিত্ব তৈরি হয়। যেমন – ফোড়া টনটন করে, গা ছমছম করে। কয়েকটি ধ্বন্যাত্মক দ্বিত্বের উদাহরণ: কুট কুট, কোঁত কোঁত, কুটুস-কুটুস, খক খক, খুটুর-খুটুর, টুং টুং, ঠুক ঠুক, ধুপ ধুপ, দুম দুম, ঢং ঢং, চকচক, জ্বলজ্বল, ঝমঝম, টসটস, থকথকে, ফুসুর ফুসুর, ভটভট, শোঁ শোঁ, হিস হিস।

কিছু ক্ষেত্রে ধ্বন্যাত্মক দ্বিত্বের মাঝখানে স্বরধ্বনির আগমন ঘটে। যেমন – খপাখপ, গবাগব, ঝটাঝট, ফটাফট, দমাদম, পটাপট।

৩. পুনরাবৃত্ত দ্বিত্ব

পুনরায় আবৃত্ত হলে তাকে পুনরাবৃত্ত দ্বিত্ব বলে। পুনরাবৃত্ত দ্বিত্ব বিভক্তিহীন বা বিভক্তিযুক্ত হতে পারে। যেমন – জ্বর জ্বর, পর পর, কবি কবি, হাতে হাতে, কথায় কথায়, জোরে জোরে ইত্যাদি। বিভক্তিহীন পুনরাবৃত্ত: ভালাে ভালাে (কথা), কত কত (লােক), হঠাৎ হঠাৎ (ব্যথা), ঘুম ঘুম (চোখ), উড় উড়ু (মন), গরম গরম (জিলাপি), হায় হায় (করা)। বিভক্তিযুক্ত পুনরাবৃত্ত: কথায় কথায় (বাড়া), মজার মজার (কথা), ঝাঁকে ঝাঁকে (চলা), চোখে চোখে (রাখা), মনে মনে (হাসা), সুরে সুরে (বলা), পথে পথে (হাঁটা)।

অনুশীলনী

১. অভিন্ন বা সামান্য পরিবর্তিত হয়ে দুইবার ব্যবহৃত হওয়া শব্দকে বলে –

ক) শব্দ পরিবর্তন

খ) শব্দদ্বিত্ব

গ) শব্দ গঠন

ঘ) শব্দ প্রয়ােগ

২. শব্দদ্বিত্ব কত প্রকার?

ক) দুই

খ) তিন

গ) চার

ঘ) পাঁচ

৩. পর পর প্রয়ােগ হওয়া কাছাকাছি চেহারার শব্দকে কী বলে?

ক) অনুকার দ্বিত্ব

খ) পুনরাবৃত্ত দ্বিত্ব

গ) ধ্বন্যাত্মক দ্বিত্ব

ঘ) পদদ্বিত্ব

৪. কোন ধরনের দ্বিত্বে বিভক্তি যুক্ত হতে দেখা যায়?

ক) অনুকার দ্বিত্বে

খ) পুনরাবৃত্ত দ্বিত্বে

গ) ধ্বনাত্মক দ্বিত্বে

ঘ) ক ও খ উভয়ই

৫. কোনটি ধ্বনাত্মক দ্বিত্বের উদাহরণ?

ক) চুপচাপ

খ) সুরে সুরে

গ) চোখে চোখে

ঘ) ঢং ঢং

৬. বিভক্তিযুক্ত শব্দদ্বিত্ব কোনটি?

ক) ঝাঁকে ঝাঁকে

খ) হায় হায়

গ) ঘুম ঘুম

ঘ) কত কত

৭. নিচের কোন ধ্বনাত্মক দ্বিত্বের মাঝখানে স্বরধ্বনির আগমন ঘটেছে?

ক) খপাখপ

খ) থকথকে

গ) ভট ভট

ঘ) মজায় মজায়

 

This article is written by :

Nahid Hasan Munna

University of Rajshahi

FOUNDER & CEO OF NAHID24

Follow him on FacebookInstagramYoutubeTwitterLinkedin

 

Leave a Comment