পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার সহজ উপায় । Nahid Hasan Munnna

সু্প্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দরা, আমি নাহিদ হাসান মুন্না, পড়াশুনা করেছি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। আজ আমি সবার একটি প্রশ্নের উত্তর দিব। প্রশ্নটি হচ্ছে ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার সহজ উপায় কী?’ আসলে ভালো কিছু অর্জন করতে হলে সহজ কোনো উপায় নেই তবে আমি নিচে কিছু পরামর্শ দিচ্ছি যা আপনার প্রস্তুতি গ্রহণ থেকে শুরু করে পরীক্ষা দেওয়া পর্যন্ত সহায়ক হবে। এই পরামর্শগুলো আজ থেকে শুরু করে পরীক্ষা দেওয়া পর্যন্ত কাজে লাগবে।

১. আত্মবিশ্বাসী হতে হবে : দেশে অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও বেশিরভাগ ছাত্র-ছাত্রী ঢাবি, রাবি, জাবি, চবি, বুয়েট, মেডিকেল এই কয়েকটি প্রতিষ্ঠানেই পড়ার জন্য আগ্রহী হয়ে থাকে। কিন্তু লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীর মাঝে নিজেকে কখনো তুচ্ছ ভাবলে প্রথমেই নিজের কাছে নিজেকে ছোট মনে হবে। মনে হবে আমার দ্বারা কিছু হবে না। তাই নিজেকে একজন যোদ্ধা হিসেবে কল্পনা করতে হবে। নিজের প্রতি নিজের বিশ্বাস থাকতে হবে যে আমি পারব। থিওডোর রোজভেল্ট এর মতে,” আপনি যখন বিশ্বাস করবেন যে আপনি পারবেন তখনি আপনি পারবেন”।

২. লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে : আপনি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন ইউনিটের প্রস্তুতি নিবেন এরকম সর্বোচ্চ ২-৩ টি পছন্দের তালিকা করতে পারেন। কারণ যে ছাত্র/ছাত্রী লক্ষ্য স্থির করে পড়াশুনা করে সে অন্যদের চেয়ে বরাবরই এগিয়ে থাকে। বিখ্যাত লেখক বিল কোপল্যান্ড এর মতে, “জীবনের লক্ষ্য না থাকার সবচেয়ে বড় সমস্যাটি হল, আপনি সারা জীবন মাঠের ভেতরে দৌড়েও গোল দিতে পারবেন না”। অর্থাৎ আপনি ৩-৪ মাস অগোছালো ভাবে শুধু পড়াশুনা করেই গেলেন কিন্তু আপনার কোনো লক্ষ্য নেই, এই পড়াশুনা আপনার স্বপ্ন পুরনে যথেষ্ট হবে না।

৩. বই কিনতে কার্পণ্য করা যাবেনা, আবার যাচাই-বাছাই করে বই কিনতে হবে : যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায় তারা কখনো বই কিনতে কার্পণ্য করে না। তাদের পড়ার টেবিলে দেখা যায় প্রচুর বইয়ের সংগ্রহ। যুদ্ধ করতে যেমন অস্ত্র প্রয়োজন, বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেতে হলে আপনার তেমনি বই প্রয়োজন। তাই বই কিনতে কখনো কার্পণ্য করবেন না। তবে বর্তমানে ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে যে ফেসবুকে বা কোনো Social Media তে কোনো বই দেখা মাত্রই ক্রয় করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, যা আরেকটু বিবেচনা করা উচিত। বই কেনার পূর্বে সেই বইটির Review Video/Post দেখে নিন। অনলাইনে/লাইব্রেরীতে কোথাও বইটির কিছু পেজ পড়ে দেখুন। বইটি নতুন বছরের নতুন সংস্করণ কি না তা দেখে নিন। আরেকটি বিষয় দেখতে পারেন যে বইটির পূর্ণাঙ্গ Class অনলাইনে ফ্রীতে কোথাও পাওয়া যায় কি না। পাওয়া গেলে আপনার বইটি শেষ করতে গিয়ে কোথাও না বুঝলেও তার সমাধান পেতে পারেন। এক্ষেত্রে Nahid24 এর বইগুলো দেখতে পারেন। বইগুলোর টপিক ভিত্তিক ক্লাস পাবেন ইউটিউব চ্যানেল Nahid24 এবং Nahid Hasan Munna এখানে।

৪. পরিকল্পনা মাফিক পড়াশুনা করতে হবে : যেকোনো কাজে সফল হতে হলে সঠিক পরিকল্পনা থাকা প্রয়োজন। তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেতে হলে সঠিক পরিকল্পনা থাকতে হবে। আমার বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে থাকে নিচের পরিকল্পনাটি Follow করে। প্রথম ২ মাস সাবজেক্ট ভিত্তিক বেসিক বই পড়তে হবে। এই ২ মাসেই যেন বইগুলো শেষ করা সম্ভব হয় সেভাবে রুটিন তৈরি করতে হবে এবং সেভাবে পড়াশুনাও করতে হবে। পরবর্তি ১ মাস বা তার বেশি সময়টি কাজে লাগাতে হবে বেশি বেশি বিগত বছরের প্রশ্ন সমাধান, মডেল টেস্ট বইয়ের মাধ্যমে নিজেকে যাচাই অথবা নিয়মিত পরীক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে। এই পরিকল্পনায় যেসকল ছাত্র-ছাত্রী পড়াশুনা করেছে তাদের সফলতার হার অনেক বেশি।

৫. সার্কুলার কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের নোটিশ বিষয়ে অবগত থাকতে হবে : শুধু পরীক্ষার প্রস্তুতি নিলেই হবে না, কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কখন সার্কুলার ছাড়লো না ছাড়লো, কোনো নোটিশ দিল কি না, কত তারিখে পরীক্ষা হবে, কোনো বিষয় বা মানবণ্টন পরিবর্তন হয়েছে কি না এসব বিষয়ে নিয়মিত আপডেট জানতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের Website গুলো ২-৩ দিন পর পর visit করলেই এইসব নোটিশ সময়মত পাওয়া সম্ভব।

৬. পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ: কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা কত তারিখে হবে তা লিখে রাখতে হবে। পরীক্ষার ডেটের প্রায় ১ সপ্তাহ পূর্বেই সেখানে যাওয়া এবং আসার টিকেট কেটে রাখতে হবে, না হলে পরে পরীক্ষা দিতে আপনার টিকেট না পাওয়া কিংবা অতিরিক্ত দামে টিকেট কিনতে হতে পারে কিংবা টিকেট নাও পেতে পারেন। তাছাড়া যেখানে পরীক্ষা দিতে যাচ্ছেন সেখানে কোথায় থাকবেন তা ঠিক করে রাখতে হবে। এক্ষেত্রে প্রথমে দেখবেন যে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকার ব্যাবস্থা আছে কি না। এ ব্যাপারে সহযোগিতা পাবেন আপনার জেলা থেকে যে ছাত্র/ছাত্রী ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে তার কাছ থেকে। যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থেকে পরীক্ষা দেওয়া যায় তাহলে সেটাই বেশি ভালো। বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার ব্যবস্থা না হলে আশেপাশে কোনো নিকট আত্মীয় আছে কি না তাদের খোঁজ নিন। এরকম কোনো আত্মীয় পাওয়া না গেলে সেই এলাকায় ভালো মানের আবাসিক হোটলে খোঁজ নিয়ে সিট বুকিং দিয়ে রাখতে পারেন।

৭. কমপক্ষে ৫ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেওয়া উচিত : আমার কিছু শিক্ষার্থী ২-১ টা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেওয়ার পর অতিরিক্ত কনফিডেন্স কিংবা খরচ কমানোর জন্য আর কোথাও ফর্ম তুলেনি। যার ফল স্বরূপ তারা এখন সারা জীবন সেই ভু্লের জন্য অফসোস করছে। মনে রাখবেন এটি আপনার স্কুল, কলেজের পরীক্ষা নয় যে এখানে খুব সহজেই পাশ করে যাবেন। এখানে সারা বাংলাদেশের ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে আপনাকে লড়াই করতে হবে। সুতরাং অভার কনফিডেন্ট হবেন না এবং ফর্ম তুলতে/ভর্তি আবেদন করতে কার্পণ্য করবেন না। আপনার জন্য শুভকামনা রইলো। আপনার সফলতা কামনা করে আজকের মতো বিদায় নিচ্ছি।

নাহিদ হাসান মুন্না,

বি. এস. এস (অনার্স),

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়,

FOUNDER & CEO OF NAHID24

Follow me on FacebookInstagramYoutubeTwitterLinkedin

 

Leave a Comment